UPASANA GRIHO

“তিনিই মেলান, এমন প্রকৃতির পাঠশালা কোথায় পাবে শান্তিনিকেতন ছাড়া?”

শান্তিনিকেতন যেন একটা আত্মা যার মধ্যে আমি মিশে গিয়েছি। জীবনের ১৮টা বছর আসনাসোলে কাটিয়েছি। আর বাকি ১৭টা বছর শান্তিনিকেতনে। সমানই তো প্রায়, তাই না! মাঝে মাঝে যখন আশ্রমের মধ্যে হাঁটতে থাকি তখন মনে হয় আমি এখানকারই। তখন মন একটা দোটানার মাঝে থাকে। বোধহয় কোনও এক সময় ছিলাম, হয়তো বা ছিলাম না। সে স্মৃতি আর নেই। কিন্তু আজ শান্তিনিকেতনের একজন হয়ে গেছি।

Basanta Utsab

‘দোল পূর্ণিমার আলো মেখে হাসছে আশ্রম মাঠ, নাচে গানে জমে উঠেছে আড্ডা’__ ফিরে দেখা বসন্ত উৎসব

বসন্ত এলেই তিনি স্মৃতিতে বাঁচেন, ঘণ্টা তলা, সেঁজুতি, গৌর প্রাঙ্গণ, আশ্রম মাঠের সেই আড্ডা। বাড়ির বারান্দা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখতে পান গোলা থাতার মতো চাঁদটা তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সেই ছোটবেলার মতো। আশ্রম মাঠে চল আড্ডা হবে। তিনি শান্তিনিকতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের গুরু ক্ষিতিমোহন সেনের নাতনি সুদর্শনা সেন। bongmag.com- এর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন বসন্ত উৎসবের স্মৃতি।

Santiniketan

মুঠো আবীরে ধামসা মাদলের তালে রঙীন বোলপুর, ডাকছে বাউলে বসন্ত উৎসব

বসন্ত এসে গেছে, আকাশে বাতাসে প্রেমের হাতছানি। ফাল্গুনকে রাঙিয়ে দিতে কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া-সহ হরেকরকম ফুলের মেলা। প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকেও রাঙিয়ে নেওয়ার সময় এসে পড়েছে প্রায়। আর মেঠো ফাগুনের আমন্ত্রণে এবারেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ডালি নিয়ে বোলপুরে হাজির ইন্ট্রাভেনাস এন্টারটেনমেন্ট। বোলপুরকে আরও একটু কালারফুল করতে, সেই সঙ্গে একটু রঙের ছোঁয়ায় বছরভরের ক্লান্তি ভুলতে আপনাকে আসতে হবে সায়রবীথির বাউলে বসন্ত উৎসবে। আগামী ৬ মার্চ থেকে ১১ মার্চ বোলপুরের তালতোড়ের সায়রবীথি কালচারাল পার্কে, প্রতিবারের মতো এবারেও দোল উপলক্ষে থাকছে একঝাঁক অনুষ্ঠান।

Basanta Utsab

দোল এলেই ভয় হয়, উন্মত্ত জনতার ভিড়ে একলাটি শান্তিনিকেতন

দোল আসছে, এসবিআই-এর পিছনের মাঠে থোকা থোকা পলাশ। বিদ্যাভবনের পুরনো অফিসে যেতে যে রাধাচূড়া পথ আটকে দাঁড়ায় সে এখন হলুদ শাড়িতে উচ্ছল তরুণী। হাতি পুকুরে ধারেও তারের ফাঁকে পলাশকে দেখলাম। কেমন লাজুক মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনায় মনটা ভরে উঠল। উত্তুরে হাওয়া সবে পথ ভুলেছে, সন্ধ্যা হলেই বোলপুরে এখন দখিন হাওয়ার পাগলামি।  দোল আসতে তো আর বাকি নেই, গতবারের বসন্ত উৎসবের বেদনাদায়ক স্মৃতি এখনও টাটকা। আভাবনীয় ভিড়ের চাপে সেদিনের শান্তিনিকেতনকে দেখে মনে হচ্ছিল মেলার মাঝে ভরসার হাতটা ছিটকে গিয়েছে। দুচোখে ভয় আর অসহায়তা নিয়ে প্রিয়জনকে খুঁজে ফিরছে সে। বিশ্বভারতীতে এখন বসন্ত উৎসব হয় ঠিকই, তবে শান্তিনিকেতনের আত্মা তখন চুরি যায়।

Basanta Utsab

ফেলে আসা মেয়েবেলা ও মন কেমনের বসন্ত উৎসব

বসন্ত পঞ্চমী যেতে না যেতেই বাতাসে ফাগুন সুর। শীতবুড়োর রুক্ষতাকে ঝেড়ে ফেলে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পলাশ। তার যে রেঙে ওঠার সময় হয়ে এল। নিজের সাজ সম্পূর্ণ করেই তো দোল পূর্ণিমায় রাঙিয়ে দেওয়ার কাজে হাত লাগাবে। পলাশ ফুটলেই আমার মনটা উড়ে যায়। সাততলা অফিসের কাচের জানলা থেকে পাক খেতে খেতে সেই অচিন গাঁ, বিষ্ণুবাটিতে। মাস্টার্স করার সময় ডিসার্টেশন পেপারের জন্য সেই সাঁওতাল গ্রামে নিত্য যাতায়াত ছিল। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে পলাশে যত রঙ ধরে বোলপুরের রাঙামাটিও তালমিলিয়ে তপ্ত হয়ে ওঠে। ততক্ষণে ফুলের মেলায় চারিদিক পূর্ণ। রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, কুর্চি, পলাশ। রবীন্দ্রভবনের বাগানে তখন হরেক ফুলের মেলা। ফুটব ফুটব করছে প্রিয় অমলতাস।