জেনারেশন নেক্সট সারাদিন ইন্টারনেট আর কম্পিউটারে মুখ গুঁজে থাকে। টিভির পর্দা সামনে পেলে শুধুমাত্র কার্টুন দেখেই সময় কাটিয়ে দেয়। এই অভিযোগ যে একেবারে ভিত্তিহীন, তা মোটেই নয়। বরং সবদিক থেকে সত্যি। সে যাইহোক গে ব্যতিক্রমী শব্দবন্ধটি যতক্ষণ অভিধানে আছে, ততক্ষণ তার বাস্তবতাও বর্তমান। এতো আর অস্বীকার করা যায় না, উপায়ও নেই। প্রায়শই দেখতে পাবেন বাবা-মা নিজেদের সন্তানের কর্মকাণ্ড নিয়ে আক্ষেপ করছেন। সেই বাবা-মা প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের হতে পারেন। হতে পারেন শিক্ষক শিক্ষিকা, নামী ইঞ্জিনিয়র, ব্যবসায়ী বা অন্য কোনও পেশার। তবে অনুযোগটা মোটের উপরে একই। আরও পড়ুন- হাত ঘড়িতেই লিপ ইয়ার দেখুন, এমনটাও হয় জানেন কি?
বাচ্চা বইটই তো বিশেষ পড়ে না। সুযোগ পেলেই টিভি, কম্পিউটারে চোখ। তবে শ্রীমতী ম্যানড্রিকের এমন কোনও অভিযোগ নেই। থাকবেই বা কী করে। একরত্তি মেয়ে অ্যাশলিন অভিযোগ করার সুযোগই দেয়নি। সে যে মাকে গর্বিত করার জন্য এতটা ব্যস্ত যে অনুযোগ অভিযোগের জন্য কোনও জায়গা খালি নেই। অ্যাশলিন ম্যানড্রিক, নামটা কি চেনা চেনা মনে হচ্ছে? না হলে এবার চিনে নিল। বছর ছয়েকের এই ব্রিটিশ শিশুকন্যা এখন সকলের চোখের মণি হয়ে উঠেছে। এসব শুনে ভাবছেন গল্প দিচ্ছি, কী আবার করবে ওই একরত্তি মেয়ে। তবে চমকের তো সবটাই বাকি রয়েছে। অ্যাশলিন ম্যানড্রিক একজন সফল পর্বতারোহী। মাত্র কয়েকদিন আগেই সে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ঘুরে এসেছে। আরও পড়ুন- বিশ্বের প্রথম! মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন চালু হল এই দেশে
মাটি থেকে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের উচ্চতা ১৭ হাজার ৫০০ ফুট। ১১ বছরের দাদা নিকোলাস ও মাকে সঙ্গে নিয়েই এই পর্বতাভিযান সম্পন্ন করল অ্যাশলিন। একই সঙ্গে সাসেক্সের ব্রাইটনের সর্বকনিষ্ঠ এভারেস্ট বেস ক্যাম্পজয়ী পর্বতারোহী হিসেবে তার নামটাই প্রথম থাকবে। যতক্ষণ না ৬ বছর বয়সের নিচে অন্য কেউ এভারেস্ট বেস ক্যাম্প জয়ে এগিয়ে আসছে। হিমালয় পর্বতমালায় ট্রেকিং করা মুখের কথা নয়। পদে পদে বিপদ ওঁত পেতে আছে। কখন যে তুষার ঝড়ে রাস্তা বন্ধ হবে কেউ জানে না। কখন যে রোদ্দুরে ঝলকানিতে চোখের অবস্থা সঙ্গীন হবে তা-ও কেউ বুঝতে পারবে না। কিম্বা ফ্রস্ট বাইটের মতো অলঙ্কার তো রয়েইছে। আরও পড়ুন- চিবানো চুইং গামে ছবি আঁকছেন বেন, লন্ডনের রাস্তায় ভিড় করে দেখছে মানুষ(দেখুন ভিডিও)
যাইহোক এসব প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জিতে গেল একরত্তি মেয়ের স্পোর্টস ম্যান স্পিরিট। পর্বতারোহণ শেষে অ্যাশলিন জানালো, কোনও কষ্টই হয়নি। মা ভিক্টোরিয়া ম্যানড্রিক মেয়ের এই উৎসাহে দারুণ খুশি। তিনি বললেন, ও গোটা পথ একাই চলেছে। কোনও পোর্টারের সহযোগিতা নেয়নি। গত সেপ্টেম্বরেই আফ্রিকার সর্বোচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো জয় করে এসেছে অ্যাশলিন। সেবারও দাদা নিকোলাসের সঙ্গে মা ভিক্টোরিয়াও মেয়ের সহ-অভিযাত্রী ছিলেন। ১৯ হাজার ৩৪ ফুট উপরে মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর চূড়া। সেখানে একবার নয় দুবার উঠেছে অ্যাশলিন। প্রথম বারের অভিযান সম্পূর্ণ হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পরেই তানজানিয়া হয়ে আবার কিলিমাঞ্জারো জয় করে সে। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা পথ তবে সেবারও সাহায্যের জন্য কোনও পোর্টারকে সঙ্গে নিতে রাজি হয়নি ওই নাবালিকা। আরও পড়ুন- প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে ইঞ্জিনিয়রের চমক, জায়গা ছেড়ে উঠছে সেতু(দেখুন ভিডিও)
এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখছে ছোট্ট অ্যাশলিন। তাইতো ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরের পর ওই বছরের ডিসেম্বরেই নতুন করে অভিযানে মন দিল সে। মা ও দাদাকে সঙ্গে নিয়ে ডিসেম্বরেই রওনা হল হিমালয়ের পথে। মাত্র ১২ দিনের যাত্রা, পোর্টার ছাড়া এভারেস্ট বেসক্যাম্প ঘুরে এল অ্যাশলিন ম্যানড্রিক। বলা বাহুল্য, ১০ বছর বয়স না হলে সাধারণত পর্বতারোহণ করা যায় না। রীতিমতো অনুমতি নিতে হয়। তবে অ্যাশলিন ম্যানড্রিক তো ইতিহাস হওয়ার জন্যই জন্মেছে। তাই ছয় বছরেই এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ছুঁয়ে ফেলল। এখনই চাইছে হিমালয়ের চূড়া ছুঁতে। তবে মা ভিক্টোরিয়া ম্যানড্রিক তাঁর পাহাড় পাগল মেয়েকে কোনওরকমে ধরে রেখেছেন। বলেছেন, বয়সটা বড়ই কম, আর একটু বড় না হলে তাকে যে কেউ হিমালয়ে চড়ার অনুমতিই দেবে না।
এভারেস্ট জয়ের পথে হাজারও বিপদ, প্রতিবন্ধকতা যখন পোড় খাওয়া ট্রেকারদের মনে সামান্য হলেও আশঙ্কার সঞ্চার করে, তখনও নির্ভিক অ্যাশলিন ম্যানড্রিক। তাইতো বেস ক্যাম্প জয়ের পর সে বলতেই পারে, এই রাস্তা তো একেবারেই সহজ ছিল। হয়তো বয়সটা কম বলে, বিপদের গুরুত্ব সে আঁচ করতে পারেনি। কিন্তু তাতে কি, পরিশ্রমতো সে আর পাঁচজন ট্রেকারের থেকে কমকিছু করেনি। প্রাপ্তবয়স্ক নয়, তাই শক্তিও বেশি নেই। তবে বয়স কম হওয়ার কোনও সুযোগই সে নেয়নি। চাইলে শেরপার কোলে চড়েও বেস ক্যাম্প অভিযান করে আসতে পারতো। তবে যাত্রা শুরুর আগে তা পত্রপাঠ নাকচ করেছে ওই মেয়ে। উত্তর পূর্ব নেপালের লুকলা থেকেই এই মহাকাব্যিক যাত্রা শুরু করেছিল অ্যাশলিন, ১২ দিনের মাথায় জয়ী হয়ে মাটিতে পা রেখেছে ব্রিটিশ তনয়া।