ঋতুমতি হওয়াটাও মহিলাদের কাছে যেন অভিশাপের মতো। শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভারতে এই সমস্যা, এমনটা ভাববেন না। প্রথম বিশ্বের উন্নত দেশ ইউরোপেও পিরিয়ডের সময় প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন জোগাড় করা মহিলাদের কাছে দুঃসহ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এটা কোনও অতীতের গল্প বলছি না, একেবারে বর্তমান। যে দেশের মহিলারা মহাকাশে দিন কাটিয়ে এসেছেন, আর সেদেশের মহিলারাই স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারছেন না। আসলে সব স্তরের মহিলাদের সাধ্যের মধ্যে নেই স্যানিটারি ন্যাপকিন।
পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপের ১৫ শতাংশ কিশোরী পিউবার্টির সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার টাকা জোগাড় করে উঠতে পারে না। আর ১৯ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিন না পেয়ে তার পরিবর্তে অন্য কোনও পন্থা অবলম্বন করে। যা তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর অবশ্যই। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শুধু টাকা নয় একটা অস্বস্তিও কাজ করছে এই ১৬-২১ বছরের মেয়েদের মধ্যে। টাকা থাকলেও তাঁরা মার্কেটে গিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন নেওয়ার কথাটি দোকানিকে বলতে সঙ্কোচ বোধ করছেন। আর এই লজ্জা পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা ৭৪ শতাংশ। ভাবতে পারেন, ইউরোপের মতো দেশে যদি এই ঘটনা ঘটে, তবে আমরা কোথায় পড়ে আছি? আরও পড়ুন-পাখি গণনা, এবার পরিযায়ী পাখির আদমশুমারী করছে কন্যাকুমারীর বনদপ্তর; কেন জানেন?
তবে দেশটা যখন ইউরোপ তখন এই সমস্যা যে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দেবে না তা বলাই বাহুল্য। হয়েছেও তাই। দেশের মহিলারা যাতে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন পেয়ে যান, তারই বন্দোবস্ত করেছে স্কটিশ সরকার। যুক্তিসঙ্গত গোপনীয়তাকে মান্যতা দিয়ে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য হচ্ছে। এনিয়ে স্কটল্যান্ডের সংসদে রীতিমতো আইন পাস হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত ঋতুস্রাব যে মৌলিক মানবাধিকার তাতে সিলমোহর দিল স্কটিশ সংসদ। এই পিরিয়ড প্রোডাক্ট সংক্রান্ত বিলটির প্রস্তাব করেছিলেন স্কটিশ সাংসদ মনিকা লেনন। পিরিয়ড ডিগনিটি বিল প্রসঙ্গে মনিকা লেনন নিজেই বলেছেন, “এগুলো মোটেই বিলাসবহুল পণ্য নয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রয়োজনীয় উপাদান। স্কটল্যান্ডের কোনও মহিলাকেই এবার থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন ছাড়া থাকতে হবে না।” আইন অনুযায়ী এই স্যানিটারি ন্যাপকিন স্কটল্যান্ডের সমস্ত ওষুধের দোকান, যুবকেন্দ্র ও কমিউনিটি সেন্টারে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে স্কটল্যান্ড মহিলাদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য করে দিল। ঠিক দুবছর আগে এই স্কটল্যান্ডই প্রথম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ফ্রি করে দিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের কমিউনিটি সেক্রেটারি অ্যালিন ক্যাম্পবল বলেছেন, “ এই যে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার বিষয়টি চালু হচ্ছে, তারজন্য বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা জরুরি। আর সেই সহযোগিতা যাতে কোনওভাবেই কম না পড়ে যায়, সেজন্য আমরা শংসাপত্র দেওয়ার বন্দোবস্ত করব। পিরিয়ড ডিগনিটির মতো একটা সর্ববৃহৎ প্রচারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কোনও সুযোগই নষ্ট করা হবে না।” দুর্ভাগ্যবশত সমগ্র ইউরোপেই স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপরে ৫ শতাংশ কর রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই কর তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁর হাত বেঁধে রেখেছিল ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের নিয়মকানুন। আরও পড়ুন- দোকান থেকে হাত সাফাইয়ের অভিযোগে মালিক, জেল হল কুকুর ছানার?
এই মুহূর্তে বিশ্বের ১৩টি দেশে পিরিয়ড প্রোডাক্ট করমুক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ রাজ্যে শুধুমাত্র স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপরে কর বসানো নেই। এই পিরিয়ড প্রোডাক্টের ক্ষেত্রের দারিদ্র্যতার ছাপ মার্কিন মুলুকেও বেশ প্রকট। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পাঁচজনের মধ্যে এক মার্কিন পড়ুয়া স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে না পারায় একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর স্কুলে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। নাহলে পিউবার্টির কয়েকটি দিন স্কুলেই যায়নি। নিজেকে লজ্জা থেকে বাঁচাতেই যে এই পন্থা নিয়েছে ওই কিশোরীরা, তা বলাই বাহুল্য।
The STUC’s Women’s Committee would like to show their support for @MonicaLennon7’s period poverty bill. Period dignity is a trade union issue, #FreePeriodProducts for all! pic.twitter.com/rGzZPegqvz
— STUC (@ScottishTUC) February 25, 2020
Parliament approved Stage 1 of the Period Product (Free Provision) Scotland today. I am thankful to everyone who made it possible.
Was nice to have my daughter by my side as Scotland sent out a strong message on period dignity and gender equality. ❤️https://t.co/CzUKQ467Kn
— Monica Lennon (@MonicaLennon7) February 25, 2020
মার্কিন কংগ্রেসের মহিলা সদস্য গ্রেস মেং বলেছেন, “মার্কিন মুলুকে এমন বহু মহিলা আছেন যারা পিউবার্টির জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারেন না। এবং ফলাফল স্বরূপ স্কুলছুট হয়, কাজে যেতে পারেন না। আর নানা রকম সামাজিক লজ্জা তাঁদের আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে। আমি এটিকে মানবাধিকার সমস্যা হিসেবেই দেখছি। বিশেষত মার্কিন মহিলাদের এই সমস্যায় পড়া একদম উচিত নয়।”