স্বাধীনতা দিবসের (Independence Day 2022) সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি। আজ কী স্কুল যাওয়া যাবে? এত যে প্যারেড প্র্যাকটিস করলাম, এই বৃষ্টিতে কীভাবে প্যারেড হবে। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই স্কুলের জন্য তৈরি হতে লাগল মন্টু। যেভাবেই হোক সে আজ স্কুলে যাবেই। বেরোনোর সময় অল্প অল্প বৃষ্টি পড়লেও স্কুলের রাস্তায় জল। তাই জুতো মোজা খুলে নিয়ে এক হাতে নিয়ে আরেক হাতে ছাতা মাথায় দিয়ে স্কুলে ঢুকল সে। ওইতো, বিশু, ফারজানা, শিল্পা, জোসেফ সবাই এসে গেছে। তারমানে ওরাও এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এসেছে। রবিও এসেছে দেখছি। ওর জন্য খারাপ লাগে মন্টুর। ওকে নাকি সামনের বছর ওর বাবা দিল্লিতে পাঠিয়ে দেবে। কী যেন কাজ পেয়েছে রবি। ও শুনেছে ওরা খুব গরীব , আর ওর বাবার পক্ষে ওর পড়ার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তাদের ক্লাসেরই আরেকটি মেয়ে, জারিনা,তারও নাকি সামনের মাসে বিয়ে। ও কী আর স্কুলে আসবেনা?
“আজ প্রাতে আমার জন্মদিন উৎসব”
আজ স্বাধীনতা দিবস (Independence Day 2022)।আজ প্যারেড হবে, পতাকা উত্তোলন হবে, গান হবে। আচ্ছা প্রত্যেক বারের মত এবারেও কি কচুরি জিলিপি দেবে? কী জানি! এইসব ভাবতে ভাবতেই বন্ধুদের দিকে এগিয়ে গেল মন্টু। একটু পরে হেড স্যার এলেই শুরু হবে অনুষ্ঠান।
ছবিটি নয়ের দশকে একটি বাংলা মাধ্যমের স্কুলের স্বাধীনতা দিবসের (Independence Day 2022)। স্বাধীনতা দিবসের প্রায় পনেরো দিন আগে থেকে শুরু হত রিহার্সাল। কারা গান গাইবে, কারা নাচবে, কারা প্যারেড করবে সব ঠিক করা হত। আর যারা এইসবে নাম দেবে, তাদের খুব মজা ছিল। টিফিনের পরের ক্লাসগুলো আর করতে হত না। রিহার্সাল করতে হত। প্যারেডের রিহার্সালে তো আরও মজা। বেশ রাস্তায় ঘোরা যায়। রোদ বৃষ্টি কিছুতেই কেউ কাবু হত না। অবশেষে আসত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৫ অগাস্ট। সব ছাত্র ছাত্রীরা সকাল সকাল পৌঁছে যেত স্কুলে। নাচগান,প্যারেড সব হওয়ার পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা পতাকা উত্তোলন করতেন, সবাই মিলে গেয়ে উঠত, “জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে”। আর সবশেষে দেওয়া হত কচুরি আর জিলিপি।
এই ছবিটা কিন্তু আজও হারিয়ে যায়নি। এখনও এই ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এখন হয়তো আরও অনেক কিছু হয়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গানের ভিডিও হয়। তিরঙ্গা পোষাক ইত্যাদি অনেক কিছুই দেখা যায়। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও কিন্তু আজও অনেক বাচ্চারাই স্কুলে এসে স্বাধীনতা দিবস (Independence Day 2022) পালন করতে পারে না। কী করে করবে? তারা স্কুলেই যায় না। আর এই করোনার প্রকোপে যে কত ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের প্রথম জন্মদিন পালিত হয় ১১০ বছর আগে
রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভারতের পতাকা বিক্রি করা মেয়েটি কী স্কুলে যেতে পারে? চায়ের দোকানে বাসন মাজা ছেলেটিও কী স্কুলে পড়ে? আমরা জানি না, জানতে চাই না। আজও স্বাধীন ভারতে শিশুশ্রমের মত ঘৃণ্য কাজ হয়ে চলেছে। আমরা যেন তা দেখেও দেখছি না। আমরা এমন স্বাধীন ভারত (Independence Day 2022) চাই না। আমরা চাই সব ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাক। কোনও ছেলেমেয়েদের আর কাজ করতে না হোক। কোনো মেয়ের পড়া অসমাপ্ত রেখে বিয়ে হয়ে যাক, এমনটা চাই না। আমরা এমন একটি স্বাধীন ভারত চাই যেখানে বিশু, মন্টু, ফারজানা, শিল্পা, রবিরা একসঙ্গে ভারতের পতাকা উত্তোলনের সময়ে গেয়ে উঠুক “জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে, ভারত ভাগ্য বিধাতা।”