Upasana Griho

২৫ বৈশাখ ও স্মৃতির মোড়কে শান্তিনিকেতন

গৌরব চৌধুরী

আমরা সবাই জানি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্র জন্মোৎসব পয়লা বৈশাখ পালিত হত তারপর গরমের ছুটি পড়ত। পরে নিয়মের পরিবর্তন আসে। ২০০৭-এ এই পবিত্র দিনেই আমার জীবনের প্রথম বিদেশযাত্রা। সকালে সাতটায় মন্দির। পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাওয়ায় ধমক খেয়েছিলাম। মন্দিরের দায়িত্বে ছিলেন বুলবুলদি (বুলবুল বসু)। বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ থেকে রবীন্দ্রনাথের একটি দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্র ও পাণ্ডুলিপির একটি পাতার প্রতিলিপি নিয়ে “২৫ বৈশাখ” নামে সুদৃশ্য কার্ড ছাপা হত। এছাড়াও পয়লা বৈশাখ, ৭ই পৌষেও কিছু পাওয়া যেত।



শিক্ষাসত্রের চন্দনদা, দুর্গাদা এবং ইতিহাস বিভাগের সন্দীপদার পিছন পিছন ঘুরে বেড়াতাম। যদি কোনরকমে একটা সংগ্রহ করা যায়। কখনও পেতাম আবার কখনও মুখ কাঁচুমাচু করে দেখতাম যদি আমার দূরবস্থা দেখে কেউ দয়াপরবশে বলেন “আয় রে গৌরব, নিয়ে যা”। মন্দিরের উপাসনার পরে জন্মোসবের অনুষ্ঠান হত শ্যামলী বাড়ির সামনে। তবে, শ্যামলী বাড়ি সংস্কারের কাজ থাকলেই পুরনো ঘন্টাতলায় অনুষ্ঠান হত। মনে আছে একবার পঁচিশে বৈশাখে বইপ্রকাশ করতে এলেন উইলিয়াম রাদিচে, গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। সেবার গুরুদেবের পিয়ানোটির সংস্কার করা হয়েছিল এবং মিলনদা (মিলন সেন) সেটিতে অনেকগুলি রবীন্দ্রসংগীত বাজান। আরও পড়ুন- “আজ প্রাতে আমার জন্মদিন উৎসব”



অনুষ্ঠান শেষে আমি দৌড়ে গেলাম পিয়ানোর দিকে। মিলনদা হেসে বললেন, “বাজাবি? বাজা।” আমি যে গান ইচ্ছা বাজাচ্ছি এ হারমোনিয়ামের মত করে পাশে ততক্ষণে ভবনের ভাই-বোনেরা, অধ্যাপকেরা চলে এসেছেন। মাধবীদি, স্বস্তিকাদি এসেও টুংটাং করে বাজিয়ে গেলেন। তখনই মঞ্জুদি (মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়) এসে বললেন, “বিবিদি এইটা বাজিয়ে গাইত জানিস!” আমার চোখ ছানাবড়া, বিবিদি মানে ইন্দিরাদেবী চৌধুরাণী। পিয়ানোর আওয়াজ যেন তখন শুধু শ্রুতিমধুর লাগছে না, কোথায় মনে হতে লাগল। আজ মনে হয় এসব গুরুদেবের দান।







অনুষ্ঠানের গান আগে পাঠানো হলে সেইভাবে মহড়া দিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হত। সেবার গান পাঠানোর সময় কর্মিসভা একটি ভয়ঙ্কর ভুল করে ফেলেছিলেন। আজও তাঁরা এটা জানেন কিনা জানি না। গানের তালিকায় একটি গান তাঁরা দিতে ভুলে গেছিলেন। গানটি ছিল “কবে আমি বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে”। অনুষ্ঠান সূচি পেয়ে তো আমাদের চোখ কপালে। এটার প্রস্তুতি তো নেওয়া হয়নি!



সংঘমিত্রাদিকে বলতে যাব এমন সময় দেখি স্বস্তিকাদি আমাদের চার বন্ধুকে ডাকছেন। মধুবন্তী নন্দী, ইন্দিরা গঙ্গোপাধ্যায়, প্রণব চন্দ্র ও আমি। উনি গানের কথাগুলো বলে গেলেন যদিও আমাদের মুখস্তই ছিল। ঠিক করে নেওয়া হল কোন্ জায়গাটা ছেলেরা গাইবে আর কোনটা মেয়েরা। এরপর “ওয়াহি গুরুজীকি ফতে” স্মরণ করে গাইতে বসে গেলাম। যখন গাইছি খাতা দেখতে হচ্ছে না, নিজেদেরই তখন মনে হচ্ছে এ গান যেন জীবনধারার মতোই বয়ে যাচ্ছে৷ স্বস্তিকাদির বাবা গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় বলতেন “যাঁর গান তিনি গাইয়ে নেবেন।” আমি ভাবি সেদিন কোন পুণ্যের ফলে গুরুদেব আমাদের আগলে রাখলেন!

 

 

Facebook Comments Box

Post Author: bongmag

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।