দেশের কর্মীদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বিনামূল্যে পরিবহনের বন্দোবস্ত করল লাক্সেমবার্গ। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের এই দেশটি ছোট এবং বেশ সমৃদ্ধশালী। স্বাভাবিকভাবেই দেশটিতে কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। সেকারণে দিনভর রাস্তায় গাড়ির মেলা লেগেই থাকে। আর প্রয়োজন ও আয়োজন সমান না হলে যা হয়, এক্ষেত্রে তাইই হয়েছে। গাড়ির ভিড়ে রাস্তা জ্যাম। ট্রাফিক ব্যবস্থা একেবারে বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতি নিয়্ন্ত্রণে আনতে হলে চারচাকা কমাতে হবে। সমৃদ্ধশালী দেশ। তাই বেশিরভাগ বাসিন্দা নিজের গাড়িতে অফিসে আসেন। রাস্তা যায় আটকে।
এবার সরকার যদি গোটা দেশেই বাস, ট্রাম পরিষেবা বিনামূল্যে করে দেয়, তাহলে আর জ্যামে পড়তে বেশিরভাগই গাড়ি নিয়ে বেরোবেন না। দেশটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। দেশের ৬০ শতাংশ বাসিন্দার গাড়ি আছে। ৪০ শতাংশ বাসিন্দা সরকারি বাস, ট্রামে চড়ে অফিসে আসেন। আর সেই পরিবহন যদি বিনামূল্যে হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ওই ৪০ শতাংশ নিত্যযাত্রী প্রতি বছর মাথাপিছু ১০০ ইউরো বাঁচিয়ে ফেলবেন। এই দূর্মূল্যের বাজারে সেটা তো কম বড় কথা নয়, তাই না। আরও পড়ুন- এই অধ্যাপক বাতিল প্লাস্টিক থেকে পেট্রোল তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন, কেন জানেন?
গত শনিবার থেকে চালু হয়েছে এই পরিষেবা। তবে সব যাত্রীরা এটা জানতেন না। তাই অনেকে বাস ধরতে এসে অবাক হয়েছেন। এবং খুশিও হয়েছেন বোধকরি। বছর ৫০-এর এক প্রৌঢ়া দাঁড়িয়েছিলেন লাক্সেমবার্গের মেন ট্রেন স্টেশনে। তিনি তো জিজ্ঞাসাই করে বসলেন, ট্রেনযাত্রা ফ্রি নাকি? তবে ডোমিনিকের মতো নিত্যযাত্রীরা এতে খুশি হলেও বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন পরিবহনকর্মীরা। মূলত যাঁরা টিকিট পরীক্ষক, বাসের কন্ডাক্টর ও ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে বসেন তাঁরা যে এখন থেকে কী করবেন, তা জানেন না। তাঁদের চাকরিটা আদৌ থাকবে কি না তানিয়েও বেশ সমস্যায় প্রত্যেকেই।
বলাবাহুল্য নিত্যযাত্রীদের মনে খুশির আবহ থাকলেও পরবিহনকর্মীদের কি ভবিষ্যৎ হতে চলেছে তানিয়ে লাক্সেমবার্গ পরিবহন মন্ত্রকের তরফে এখনও কিছুই জানানো হয়নি। মূলত গোটা দেশ থেকে গাড়ির ভিড় কমাতেই সরকারি পরিবহন বিনামূল্যে করে দেওয়া হয়েছে। সমগ্র লাক্সেমার্গে যত প্রাইভেট কার চলে তারমধ্যে ৪৭ শতাংশ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হয়। বাকি ৭১ শতাংশ শুধু টাইম পাস করতে সারা দিন দেশের ব্যস্ত শহরগুলিতে চড়ে বেড়ায়। প্রতিদিন কর্মসূত্রে প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানি থেকে সবমিলিয়ে দু’লক্ষ লোক লাক্সেমবার্গে আসেন। এঁরা সাধারণত নিজেদের গাড়িতে চড়ে সীমান্ত পেরিয়েই যাতায়াত করেন প্রতিদিন। আর এই প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের কল্যাণেই লাক্সেমবার্গে সবথেকে বড় ট্রাফিক জ্যাম গুলো হয়। এদিকে ছোট্টো দেশটির জনসংখ্যা ৬ লক্ষ ১০ হাজার। আর প্রতিদিন যাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে চাকরি করতে আসেন। তাঁর লাক্সেমবার্গে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। তাহলে তো ট্রাফিক জ্যাম হতে বাধ্য, তাই না। আরও পড়ুন- আজ থেকেই হোয়াটসঅ্যাপের ডার্ক মোড থিম আপনার ফোনে, কীভাবে ব্যবহার করবেন?
রাজধানী শহরে ট্রাম নেটওয়ার্ক তৈরি করছে সরকার, যদিও যাত্রীদের দাবি তা মোটেই খুব এক পদের নয়। পরে হয়তো শহরের নর্দান এয়ারপোর্টের সঙ্গে যুক্ত হবে এই ট্রাম নেটওয়ার্ক। মূলত পরিবশের কথা চিন্তা করেই এই নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে বলে জানালেন সেদেশে এক প্রশাসনিক কর্তা। সিস্টেমেটিক ওয়েতে গোটা ব্যবস্থা চললে সরকারি পরিবহনের প্রতি দেশের মানুষের আকর্ষণ বাড়বে বলেই মনে করছে প্রশাসন। এই পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে গিয়ে আগেই সরকারের ৫০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে। সেই টাকা তো আর যাত্রী ভাড়া থেকে উঠবে না। সরকারি কোষাগার থেকেই ঘাটতি মেটাতে হবে।
স্টেশন থেকে ধীরে ধীরে টিকিটের মেশিনগুলিকে তুলে নেওয়া হবে। তবে অফিস থেকে টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকবে। মূলত লাক্সেমবার্গের মধ্যে কেউ যদি প্রথম শ্রেণিতে যাতায়াত করতে চান, তাঁকে শুধু টিকিট কাটতে হবে। তিনি কাউন্টারে এসে টিকিট কিনতে পারবেন। আর আন্তর্জাতিক ট্রিপ করতে গেলে কাটতে হবে টিকিট। মোটের উপর এই পরিষেবা পেতে হলে, আগের মতোই গ্যাঁটের কড়ি খরচা করে সবাইকেই টিকিট কিনতে হবে।