উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ বিয়েবাড়ি তো কাল বন্ধুর ব্যাচেলর পার্টি। পরশুদিন আবার অফিস পিকনিক। পরের দিন ডেটিংয়ে যাওয়ার প্ল্যান। অফিস ফেরতা প্রতিদিন পার্লারে দৌড়ালে শুধু সময় নয়, ত্বকেরও হাঁফ ধরে যাবে। এক লহমায় পার্লারের হেয়ারড্রেসার হয়তো আপনার চুলকে পছন্দমতো লুকসে সেট করে দেবেন। কিন্তু এত হিট ও ড্রায়ারের ব্যবহারে চুল তার স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে ফেলতে পারে। এখন আবার কার্লি নয় স্ট্রেইটনিংয়ের যুগ চলছে, লম্বা চুল স্ট্রেট (Straight Hair) করে নিলে বিয়েবাড়িতে এক ঢাল চুল পিঠে, শাড়ি থেকে ড্রেস, বা ল্যাহেঙ্গা সবেতেই হিট।
ওয়েস্টার্ন আউট ফিটে ডেটিংয়ে যেতে চান। উডবির নজরে শুধু আপনার আকর্ষণীয় চেহারাই নয়, আসবে শাইনি হেয়ারও। তবে বার বার পার্লারে গিয়ে স্ট্রেইটনিং করালে চুলের সজীবত্ব নষ্ট হতে পারে। আর উইকএন্ডটা না হয় প্রিয়জনদের সঙ্গে বাড়িতেই কাটালেন। তারই মধ্যে সময় করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল যদি স্ট্রেইট করার সুযোগ পেয়ে যান, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
১. নারকোল দুধ ও লেবুর রস-
শীতকাল পিঠেপুলির সময়, নারকোল বাড়িতে আসছে। টুক করে খানিকটা দুধ ফ্রিজারে রেখে দিন। রাত পোহালেই সাপ্তাহিক ছুটি এইবেলা দুই টেবিল চামচ নারকোল দুধ এবং এক টেবিল চামচ লেবুর রস নিয়ে নিন। দুটোর মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর গোটা রাতের জন্য ফ্রিজারে তুলে রাখুন। সকালে মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভাল করে মাখিয়ে ফেলুন। তারপর ৩০ মিনিট রেখে সালফেট মুক্ত কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুলটা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একদিন করলেই যথেষ্ট। দেখবেন অফিস কলিগও হিংসের চোখে তাকাচ্ছে।
লেবুর রস চুলকে সোজা করতে সাহায্য করে। এবং নারকোলের দুধ চুলের গোড়ায় ভিটামিন সি জোগান দেয়| এই মিশ্রণে চুল যেমন সিল্কি হয় তেমন মসৃণও।
২. চুল সোজা করতে দুধের স্প্রে –
নারকোল দুধ আগেই ফ্রিজারে রেখেছেন। এবার স্প্রের পাত্রে ভরে ফেলুন। এরপর সপ্তাহে অন্তত দুদিন এই দুধ সারা চুলে স্প্রে করুন। এবং স্প্রের ঠিক আধঘণ্টা পরে চুল ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। কিন্তু মনে রাখবেন স্প্রের জন্য নেওয়া দুধ যেন হাফ কাপের কম না হয়। দুধ চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করে। কোঁকড়ানো ভাবকে নিয়্ন্ত্রণে আনে। চুলকে যেমন পুষ্টি দেয় তেমনই সিল্কিও করে।
৩. ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েলে আছে চুলের গ্রোথ আর চুল সোজা করার গুনাগুণ| এই তেল চুলের স্ক্যাল্পে ভাল ভাবে ম্যাসাজ করে তারপর চিরুনি দিয়ে চুল বরাবর আঁচড়াতে হবে| যখন চুল আঁচড়াবেন তখন ব্লো ড্রাই করুন হাই হিটে| ব্লো ড্রাই করার পর চুলে যেন তেলতেলে ভাব না থাকে, চুল হতে হবে শুষ্ক| তারপর একটি ভেজা তোয়ালে দিয়ে চুল জড়িয়ে রাখতে হবে আধঘণ্টা| এটা চুলকে অতিরিক্ত হিট থেকে রক্ষা করবে আর স্ট্রেইটনেস বজায় থাকবে|
৪. বানানা হেয়ার প্যাক
দুটি অতিরিক্ত পেকে যাওয়া কলা নিন। কলাদুটিকে ভাল করে চটকে নিন। তাতে দুই টেবিল চামচ মধু, দই এবং অলিভ অয়েল দিন। সঙ্গে ১টি ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে দিন| এই প্যাক পুরো চুলে লাগিয়ে ফেলুন। তারপর শাওয়ার ক্যাপে মাথা মুড়ে আধঘণ্টা রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললেই একমাথা শাইনি স্ট্রেইট হেয়ার।
৫. হট অয়েল ট্রিটমেন্ট
চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করা যে কতটা উপকারী তা আর আলাদা করে বলার নেই। নারকোল, অলিভ, তিল বা বাদাম। যে কোনও তেল, হালকা করে গরম করে মাথায় লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে ভাল করে ম্যাসাজ করতে হবে| তারপর চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন। এরপর স্টিমড তোয়ালে দিয়ে মাথা অন্তত ৩০-৪০ মিনিট ঢেকে রাখুন| সময় হলে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। কোঁকড়ানো, বাউন্সি চুলকে সহজে সোজা করার এটা কিন্তু দারুণ একটা উপায় হতেই পারে|
৬. ডিম এবং অলিভ অয়েল
ডিম এবং অলিভ অয়েলের মিশ্রণ আপনার চুলের জন্যে দারুণ হেয়ার প্যাক হতেই পারে। ডিম চুলের গোড়াকে মজবুত করবে। আর অলিভ অয়েল চুলকে ময়শ্চারাইজড রাখবে। তেমনই এই দুটোর মিশ্রণে চুল সহজে সোজাও হবে। দুটো ডিম, চার চামচ অলিভ অয়েল নিন। ডিম ভাল করে ফেটিয়ে তাতে অলিভ অয়েল দিন। মিশ্রণটি তৈরি হলে মাথায় ভাল করে মাখিয়ে বড় দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন| শাওয়ার ক্যাপ পরে মিনিট ৪০ মতো রেখে হালকা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললেই রেডি। নিজেই পার্থক্য বুঝে যাবেন।
৭. অ্যালোভেরা
চুলের যত্নের উপাদান হিসেবে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই। অ্যালোভেরায় থাকা এনজাইম চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে| তাছাড়া অ্যালোভেরা চুলকে নরম এবং মসৃণ ও ময়েশ্চারাইজড করে| হাফ কাপ অ্যালোভেরার রস ও হাফ কাপ গরম অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। মাথার চুলে আর স্ক্যাল্পে ভাল করে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর ঘণ্টা দুয়েক মতো রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে| এভাবেই পেয়ে যাবেন মনের মতো চুল।