সুরের মূর্চ্ছনায় যিনি একবার নিজেকে বেঁধে ফেলেছেন, তাঁর পক্ষে সুর ছাড়া সবকিছুই অর্থহীন। সে বাঁশিবাদকই হোন বা বেহালাবাদক। সুরহীন পৃথিবীতে তাঁকে রাখা মানে মেরে ফেলার শামিল। কোনও সুরেলা কণ্ঠী যেমন একদিন যদি জানতে পারেন, ভাগ্য তাঁর গলা থেকে গান কেড়েছে তবে সে যন্ত্রণা আর কিছুতেই নেই। তবুও মিরাক্যাল ঘটে। তাইতো আশারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। এমন ঘটনা ঘটেছে লন্ডনে, বছর ৫৩-র ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট ডাগমার টার্নার দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলেন। মাথা তাঁর আর ঠিকমতো কাজ করছে না। একদিন কিংস কলেজের হাসপাতালে গিয়ে নিউরো বিভাগে নাম লেখালেন। মাথায় তাঁর কি হয়েছে জানতে হবে। সেই ১০ বছর বয়স থেকে বেহালা বাজাচ্ছেন, এখন চেষ্টা করেও সুর তুলতে পারছেন না।
মাথা ছিঁড়ে পড়ছে অসহ্য যন্ত্রণায়। হাতও যেন ঠিকমতো কাজ করছে না। কিংস কলেজের প্রখ্যাত নিউরো সার্জন প্রফেসর কেউমারস আশকান টার্নারকে পরীক্ষা করেই বুঝতে পারেন, ওই মহিলা একদম ভাল নেই। তাঁর মস্তিষ্কের ডানদিকে ফ্রন্টাল লোবের কাছে বাসা বেঁধেছে মারণ টিউমার। এর জেরে চিরতরে অক্ষম হয়ে যেতে পারেন টার্নার। তাঁর সাধের বেহালা হয়তো অস্ত্রোপচারের পর আর সুর তুলবে না। কেননা মাথাই তো আমাদের শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পরিচালনা করে। সেই মাথা যদি কাজ না করে তবে দেহ চলে কী করে। মস্তিষ্কের যে অংশ থেকে মানব শরীরের বাঁ-হাতের গতিবিধি নিয়ন্ত্রত হয়, তার আশপাশেই আস্তানা বানিয়েছে ওই টিউমার। অপারেশনের পর হয়তো বাম হাত আর নড়বে না। ডাগমার টার্নারের বেহালা বাজানোও চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।
এই খবরে বেজায় মুষড়ে পড়েন ওই রোগিণী। কিন্তু মাথায় যন্ত্রণা চেপে তো আর দিন কাটাতে পারেন না। তাই অস্ত্রোপচারে রাজি হয়ে যান। তবে একটা ইচ্ছেপূরণের আব্দার রয়েছে চিকিৎসকদের কাছে। জানতে চাইলে বলেন, আর তো কোনওদিন বেহালা বাজাতে পারব না। তাই অপারেশন চলাকালীন শেষবারের মতো বাজাতে চাই। এই ঘটনায় প্রথমে খানিকটা অবাক হলেও রোগিণীর মানসিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে তাতে সায় দেন প্রফেসর কেউমারস আশকান। শুরু হয় অপারেশন। মস্তিষ্কের টিউমার বাদ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। সকলের চোখেমুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ। সেই সময় অপারেশন টেবিলে শুয়েই একমনে বেহালা বাজিয়ে চলেছেন ডাগমার টার্নার।
অপারেশন সম্পূর্ণ হয়েছে, সৌভাগ্যবশত ভাল আছেন ওই মহিলা। তাঁর বাম হাতও সচল রয়েছে। খুলি অপারেশনের সময় তিনি নিবিষ্ট মনে বেহালা বাজিয়ে আসলে চিকিৎসকদের কাজটাই সহজ করে দিয়েছিলেন। এমন অভিজ্ঞতা কিংস কলেজের নিউরো সার্জনদের আগে কখনও হয়নি। তাঁরাও অবাক হয়েছেন। তবে স্বস্তি পেয়েছেন এটা জেনে যে রোগিণী ডাগমার টার্নার সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। বেহালাও বাজাতে পারবেন। কয়েকদিন হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফিরলেই ফের সুর তুলবে ডাগমারের বেহালা। অপারেশন টেবিলে ডাগমারের বেহালা বাজানোর ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
মারণ টিউমার বাদ দিতে মাথায় চলেছে জটিল অস্ত্রোপচার, অপারেশন টেবিলে বেহালা বাজাচ্ছেন রোগিণী
Facebook Comments Box