Aesthetics ,ব্যাঙ্কের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভালবাসার পেশাকে উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তেমনই করে দেখিয়েছেন যাদবপুরের শুভাশিস মজুমদার। প্রায় ২২ বছর আগের ঘটনা। কলকাতা শহরে তখন ফ্ল্যাট বাড়ির রমরমা সবে শুরু হয়েছে। গ্রাহককে লোন দিতে হলে সাইট ভিজিট জরুরি। তাই শুভাশিসবাবুকেও যেতে হত সেই সব নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাট দেখতে। মনের মধ্যে এতদিনের সুপ্ত বাসনা তখনই জেগে উঠেছিল, ইনটেরিয়র ডিজাইনিং। তিনি ঠিক করেন এই নতুন ফ্ল্যাটের মালিককেই তিনি বোঝাবেন, ইনটেরিয়র ডিজাইনিং আসলে কী। তবে তার আগে নিজেকে বুঝতে হবে।
তাই দুম করে চাকরিটা ছেড়েই দিলেন। তখন ২০০০ সাল, ইনটেরিয়ার ডিজাইনিঙের নাড়িনক্ষত্র জানতে পেশাদার কোর্সে ভর্তিও হলেন। দেড় বছর নিলেন প্রশিক্ষণ। তারপর ২০০২-তে তৈরি করলেন নিজের ইনটেরিয়র ফার্ম। একেবারে একা কুম্ভ হয়েই সেই থেকে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন সফলভাবে। নিজের কাজে বেজায় খুতখুতে শুভাশিসবাবু সবসময় চাইতেন গ্রাহক যেন তাঁর কাজে খুশি থাকেন। তাহলেই তিনি সাফল্য লাভ করবেন। সেকারণেই গত ২০ বছরে কাগজে, টিভিতে, হোর্ডিঙে কোনওরকম বিজ্ঞাপন না দিয়েও Aesthetics এখন ইটেরিয়র ডিজাইনিঙের দুনিয়ায় বেশ পরিচিত একটি নাম।
বিজ্ঞাপন নয়, প্রচার নয়, বরং ভাল কাজে বিশ্বাস রাখেন শুভাশিস মজুমদার। পুরোনো গ্রাহক Aesthetics-এর কাজে খুশি হয়ে নতুন ফ্ল্যাটের মালিককে বা নবদম্পতিকে ইনটেরিয়র ডিজাইনিঙের জন্য শুভাশিসবাবুর নামই শোনান। ফিরে আসি নামের কথায়, মানুষের ঘর সাজাবেন তিনি। তাই নামটিও যথাযথ হওয়া উচিত। সেকারণেই Aesthetics-কে বেছে নেওয়া। Aesthetics-এর অর্থই হল সৌন্দর্যায়ন।
আরও পড়ুন- Durgapur: দুর্গাপুরের ইতিকথা
কথা প্রসঙ্গে জানালেন, ২২ বছর আগে কলকাতা শহরে ইনটেরিয়র কথাটা দুর্মূল্য ছিল। লোকের কাছে কঠিন একটা শব্দ। ইনটেরিয়র খুবই খরচ সাপেক্ষ বিষয় এমনটাই মনে করা হত। তাই হাইপ্রোফাইল ক্লায়েন্ট ছাড়া ব্যবসার কাজ সেভাবে এগনো যেত না। একমাত্র দামী প্রজেক্টের লোকজনই ইনটেরিয়র ডিজাইনিং ফার্মের ধারে কাছে ঘেঁষতেন না, বাকিরা ভুলেও ওই পথে মা মাড়াতেন না।
তবে এখন ২০ বছরে ছবিটা অনেকখানি বদলেছে। ইনটেরিয়র এখন অতিপরিচিত একটি শব্দ। বাড়ি রং করালেও লোকজন এখন বলে ইনটেরিয়র করাচ্ছি। ২০০২ সালে বড় বড় প্রোমোটাররাও তাঁর মুখে মডিউলার কিচেনের নাম শুনে বোঝার চেষ্টা করতেন, এটা কী? তখন কলকাতায় লোহার বাস্টেক চলত প্লাস্টিক কোটিং করা। আমি তখন বম্বে থেকে মাল এনে এখানে মডিউলার কিচেন তৈরি করে দেখালাম, কিভাবে আধুনিক রান্নাঘর তৈরি হয়। সেই সময়ে ২০ হাজার টাকায় তৈরি হত একটি মডিউলার কিচেন। তখন ২০ হাজার টাকা অনেক বড় ব্যাপার।
Aesthetics বরাবর টেকনিক্যালিটিতে বিশ্বাস করে এসেছে। নতুন ফ্ল্যাটের বাথরুমের বিরীত দেওয়ালে একটা সময় ড্যাম্প পড়ে যেতে পারে। তেমন কিছু ঘটার আগেই গ্রাহককে সেকথা জানিয়ে দেন শুভাশিস মজুমদার। গৃহপ্রবেশের আগেই এমন আগত সমস্যার কথা শুনে সমাধানও খুঁজে নেন নতুন বাসিন্দা। কোনওরকম প্রলোভনে গ্রাহককে ভোলায় না Aesthetics। কাজ শুরু আগে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আলোচনা বাজেট নির্ভর সবচেয়ে ভাল প্রোডাক্টই গ্রাহককে বেছে নিতে সাহায্য করেন কর্ণধার শুভাশিস বাবু। তাঁর কাছে ব্র্যান্ড যেমন একটা বিষয়, তেমনই কোয়ালিটিও একটা বিষয়। স্থপতি যে ডিজাইনে বাড়ি তৈরি করবেন, সাধারণ ঠিকাদার কিন্তু তা করতে পারেবন না।
আরও পড়ুন-ক্যানভাসে বৃষ্টির রাত, প্রহর জাগে ১৪ ফেব্রুয়ারি
এখন ইনটেরিয়র সম্পর্কে সবাই কমবেশি ওয়াকিবহাল, সেখানে ১৫ লাখের ফ্ল্যাট হোক বা বেশি দামের। গৃহপ্রবেশের আগে ইনটেরিয়র ডিজাইনারকে দিয়ে আজকাল সবাই কিছু না কিছু কাজ করাতে চান। এর মধ্যে একদম প্রথম দিকে থাকে বাড়ির রান্নাঘরকে সাজিয়ে তোলা। বাড়ির মহিলারা দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান এই রান্নাঘরে। তাই রান্নাঘর সুন্দর করার স্বপ্ন আজকালকার দিনে মহিলাদের অন্যতম প্রধান ইচ্ছের মধ্যে পড়ে। তবে আমাদের দেশে মডিউলার কিচেন কথাটি জনপ্রিয় হলেও এটিকে সেমি-মডিউলার বলাই যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া মডিউলার কিচেনের অর্থই হল যখন তখন সেই রান্নাঘরের স্থান বদল করা যায়। আমাদের দেশের কোনও ফ্ল্যাটে রান্নাঘর কখনও স্থানান্তর হয় না। তাই এটি সেমি-মডিউলার কিচেন।
Aestheetics ব্লকবোর্ড নিয়েই কাজ করে থাকে। ব্লক বোর্ডের থিকনেস ১৯ মিলিমিটার। সলিড কাঠে তৈরি হয় এই ব্লকবোর্ড। শুভাশিসবাবু মডিউলার কিচেন বানাতে পাইনের ব্লকবোর্ড ব্যবহার করে থাকেন। কারণ প্রাকৃতকভাবেই পাইন কাাঠে ঘুণ ধরে না। এমনকী, সেই পাইন কাঠের ব্লকবোর্ডে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করিয়ে নেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে ড্যাম্প জনিতত ক্ষতি হয় না। দু’দিকেই ল্যামিনেট থাকে। প্রান্তে থাকে পিভিসির টেপ। যাতে জল লাগলেও মূল ব্লকবোর্ড অক্ষত থাকে। দেওয়ালে ড্যাম্পের সমস্যা দেখা না দিলে দীর্ঘদিন ভাল থাকে এই ব্লকবোর্ডের কিচেন।
মডিউলার কিচেন তৈরিতে মার্কেটের বেস্ট ব্রান্ডেড চ্যানেল ব্যবহার করা হয়। SS302-304 গ্রেডের স্টেনলেস স্টিলে হয় বাস্কেট। যাতে মরচে পড়ে না। টেলিস্কোপ চ্যানেল বেস্ট কোয়ালিটি, হিঞ্চও ব্র্যান্ডেড। একটা ৮/৬ কিচেন মডিউলার করাতে ব্লকবোর্ডে ৭০ হাজারের বাজেট মাথায় রেখে এগোতে পারেন গ্রাহকরা। এমনটাই পরামর্শ দিচ্ছেন শুভাশিস মজুমদার।
ঋতুর বিপরীতে
প্রকৃতবান্ধব প্রোডাক্টে ভরসা রাখেন তিনি। তাই এমডিএফ, ব্লক বোর্ডের পর কলকাতার মার্কেটের ইনটেরিয়র ডিজাইনের জগতে নতুন প্রোডাক্ট UPVC আসতেই নতুন উদ্যমে কাজে লেগে পড়েছেন শুভাশিসবাবু। নিজেই জানালেন সেকথা। পলিভিনাইল ক্লোরাইড হল PVC। আর UPVC আন প্লাস্টিসায়েড পলিভিনাল ক্লোরাইড। ফ্ল্যাটের বাথরুমের পাইপগুলি আজকাল UPVC-র হয়ে থাকে। সেই UPVC এখন বোর্ড আকারে এসে গেছে। ড্যাম্প নিরোধক, ঘুণের বালাই নেই, পরিবেশ বান্ধব, রান্নার সময় আগুনের তাপে UPVC পুড়ে যাবে না। জলেও নষ্ট হবে না।এখানেই কিন্তু UPVC-র গুণাবলী শেষ হচ্ছে না। সর্বোপরি বাজেট ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্ট এই UPVC।
৭০ হাজারের কিচেন আপনি ৪০ হাজারে পেয়ে যেতে পারেন। তবে খরচ কম হলেও কোনওরকম আপোষ কিন্তু আপনাকে করতে হচ্ছে না। গ্রাহকের পকেটে চাপ না ফেলে গাছ বাঁচাতে UPVC-র ব্যবহার যদি বাড়ে তাহলে শুভাশিসবাবু নিজেই খুশি হবেন। কারণ তিনি মনে করেন ইনটেরিয়রের সূত্রেই গ্রাহকের সঙ্গে Aesthetics-এর ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়। নতুন গ্রাহকের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনার পর তাঁর পছন্দমতো প্রোডাক্টি সঠিক উপায়ে তৈরি করে দেওয়াই তাঁর কাজ। গ্রাহক চাইলে বেশি খরচ করে ব্লকবোর্ডে বাড়ি ইনটেরিয়র করাতেই পারেন। কিন্তু আমরা তো কেউ পরিবেশের বাইরের নই। তাই পরিবেশ বাঁচাতে যদি UPVC গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, তাহলে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে সেই উদ্যোগকে সম্পূর্ণভাবে সাধুবাদ জানাতে প্রস্তুত Aesthetics। আর শুভাশিস মজুমাদের হাতেই যদি নিজের বাড়ি সাজাতে চান তাহলে সঙ্গে রাখুন এই 8981293478 নম্বর।