ফাল্গুন মাস মনে গুনগুনের সূচনা করে। পলাশ ফুটলেও কেমন যেন প্রেম পায়। তার উপরে সরস্বতীপুজো ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-ও শেষ। সামনে দোল, রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার পালা আসছে আসছে করছে। এমন সময় যদি প্রপোজটা করেই ফেলেন, তবে আসছে বৈশাখে বিয়েটা হয়েই যাবে। আর উৎসাহ বেশি থাকলে এই ফাগুনেই চারহাত এক করতে তো কোনও পুরোহিতের দরকার পড়ছে না। টুক করে ম্যারেজ রেজিস্টারের কাছে চলে গেলেই হবে। যাকগে পুরোহিত বা ঘটক কোনও ভূমিকাতেই থাকছি না। তবে প্রেমে আছি, চাইলে নেমন্তন্ন বাড়িতে গিয়ে কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি বর-কনের সঙ্গে সেলফি তুলতেও একপায়ে খাড়া। কিন্তু ওই যে বললাম, প্রেমটা কিন্তু হওয়া চাই। তবে বিয়ের আগে হয়ে গেলেই ভাল। কথায় আছে না ‘কাল কিসিনে দেখা।’ আরও পড়ুন-চিবানো চুইং গামে ছবি আঁকছেন বেন, লন্ডনের রাস্তায় ভিড় করে দেখছে মানুষ(দেখুন ভিডিও)
বিয়ের পড়ে বাঙাল ঘটি ফাটাফাটি, নাকি আধুনিকতা বনাম টিপিক্যাল বাঙালির বধূর লড়াই সে না হয় দাম্পত্য কলহের জায়গা নেবে। তা টোনাটুনির মধ্যেই থাক। পাশের বাড়ির পাড়া বেড়ানো পিসিমার জায়গায় বসার ইচ্ছে নেই। কিন্তু প্রেম যখন হবে, তার প্রকাশযোগ্য একটা অবস্থানও তো থাকবে। আরে মশাই যতই বলুন এখনকার দিনে কেউ ওই ভালবাসি ভালবাসি বলে গদগদ প্রেমে ভোলে না। আসলে বাস্তবটাই এতটা বেশি মাত্রায় ঝাঁঝাল হয়ে গিয়েছে যে ওই প্রেমটাই যেন কোথায় খাটো হয়েছে। সে পাটিগণিতের হিসেবে হতে পারে, কিম্বা দাড়িপাল্লার দড়িতে। এত বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে নন্দনতত্ত্বেই থাকব। প্রেমের নান্দনিকতা, এই হিংসা, দ্বেষ, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির আবহে একমাত্র মুহূর্ত, যেখানে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার একটা জায়গা থাকে। আরও পড়ুন-এই পুজোতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য ভেদ করতে চলেছেন একঝাঁক অভিযাত্রী, যাবেন নাকি?
প্রেম এল আর অমনি বলে ফেললাম আর চারহাত এক করে দিলেন দুই পরিবারের বাবা-কাকারা। এটা কিন্তু সেলুকাসের ‘এলাম দেখলাম জয় করলাম’-এর মতো এতটাও জলভাত সবক্ষেত্রে হয়নি। প্রেম আসে, যদি দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে দুজনের পরিচয়, তবে তো ভাবতে হচ্ছে। এই বম্ব বাস্টিং সুন্দরী এতদিন ফাঁকা ছিল কীকরে। আদৌ ছিল নাকি মতের মিল না হয় ব্রেক আপ হয়েছে। ওহ, এই প্রসঙ্গে তো কিছু বলাই হয়নি। ছাড়াছাড়ি বছর দশেক আগেও এই শব্দটার একটা চল ছিল। এখন তো সোজা ব্রেকআপ, এবং সামান্যতেই। দূর, জীবনটা এত বড় কেন মিছিমিছি আপোষ করতে যাবেন বলুন তো। এমন কথা কান পাতলে শুনতেই পাবেন। আবার এটাও শুনবেন দুজনেই বুঝতে পারছিলাম, প্রথমদিকের সেই টান আর নেই। তাই তিক্ততা না বাড়িয়ে সরে এসেছি। এখন আমরা বন্ধু। তা ভাল বিচ্ছেদের আগে যদি ব্রেকআপে বিষয়টা আটকে যায় তবে ক্ষতির পরিমাণ সামান্য হলেও কমই। অন্তত এই বাজারে। আমি মনের খবর রাখি না বাপু, সে যার মন তার বোঝার ব্যাপার। কিন্তু বিয়ের খরচটা তো ভাববার। তায় ভারত এখন অর্থনৈতি মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজের যা দাম, বিয়েতে রেজালা খাইয়ে যখন ক্যাটারারকে টাকা গুনতি গিয়ে আপনার কালঘাম ছুটছে। তখন যদি বউ বলে ডিভোর্স চাই তাহলে তো চিত্তির। যাকগে, প্রেমের আগে এমন অশুভ আলাপন বন্ধই থাক, প্রেম থাকুক প্রেমে। আর কে না জানে, ভালবাসার জয় কিন্তু সবকিছুর আগে।
যেমন আমার গল্পের নায়ক ড্যান, ড্যান ট্যাফো। আর নায়িকা জুলিয়া ক্যালমার্টেন। দুজনেই পেশায় ইঞ্জিনিয়র। একই সঙ্গে কর্মজীবন শুরু। নিউ হ্যাম্পশায়ার ইউনিভার্সিটিতেও দুজনের আলাপ। তাই জানার পরিধিও দুজনের কাছে খুব বেশি আলাদা নয়। ট্যাফো আগে প্রেমে পড়ল। জুলিয়া যে তার মনের খবর রাখেনি তা নয়। তবে, সে-ও প্রেমের প্রকাশ দেখতে চাইল। ড্যান মনে মনেই বিষয়টি বুঝে নিল। নিউ হ্যাম্পশায়ারে অধীন একটা সেতু তৈরির বরাত পেল দুজনে। তাঁরাই ইঞ্জিনিয়র। প্রথম কাজ একেবারে জান লড়িয়ে দিল। কাজ তো উতড়ে গেল। কিন্তু সেই সেতু দেখে কর্তৃপক্ষের চক্ষুস্থির। আর ড্যানের ব্যাখ্যা শুনে তো চমক ভাঙেই না। সেতুর উচ্চতা তুলনামূলক বেশ বেশি। ড্যান চায় এই সেতুতেই জুলিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। কর্তৃপক্ষ ড্যানের ইচ্ছের মর্যাদা দেয়। বাড়ির লোকজনকে সঙ্গে নিয়েই প্রেমিক প্রবর সেতুতে হাজির। জুলিয়াও এসেছে, সে জানত, ড্যান আজ কোনও বিশেষ মুহূর্তের জন্যই তাকে ডেকেছে। প্রেমিকার মন তো আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। এত সুন্দরভাবে ড্যান তার আগামীর ভার নিতে চাইল, যা দেখে জুলিয়া অভিভূত। আবেগাপ্লুত ভাবটা কাটিয়ে হ্যাঁ বলতেই ড্যানের বাড়ির লোকজন হাততালিতে জুলিয়াকে অভিবাদন জানাল। বসন্তের বাতাস, কান পাতলেই প্রেমের কথা, এমন সময় ড্যানের এহেন প্রেম নিবেদন, জুলিয়া আজীবন মনে রাখবে তা বলাই বাহুল্য। চলে আসি সেতুর বর্ণনায়, দুপাশের লোহার পরিকাঠামো সোজা উটে গেছে। মাঝ বরাবর সেতুবন্ধনে আসছে আর একটা কাঠামো। পোর্টসমাউথের নতুন ব্রিজ। আগের সেতুটি কালের নিয়মে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হওয়াতেই নতুনের আগমন। সেটির বিপজ্জনক পরিস্থিতি যেকোনও দিন দুর্ঘটনার খবর বয়ে আনতে পারত। তাইতো নিউ হ্যাম্পশায়র সেতু তৈরির বরাত দেয়। ড্যান সেই সেতুর সঙ্গেই অক্ষয় করে রাখলেন নিজের প্রেমকাহিনী।
সেতুটিতে এমন ধরনের মেকানিজম ব্যবহার করা হয়েছে যে, আপনি সেতুর মাঝ বরাবর গেলেন আর দুপাশের শক্ত বাঁধন থেকে সামন্য আলগা হয়ে সেতু উঠতে শুরু করল উপরের দিকে। মনে হবে নাগরদোলায় চড়ছেন, তবে তা কিন্তু নয়। এটিই নিউ হ্যামশাার ব্রিজের চমক। যেহেতু দুপাশের কাঠামো সেতু থেকে অনেকটাই উঁচুতে তাই সেতুর ওঠানামায় কোনও যান্ত্রিক গোলযোগের কারণ নেই। এটাই সেতুর অভিনব মেকানিজম, তবে সবসময় সেতু এভাবে উঠবে না। কেননা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে যখন সেতু জুড়েছে, তখন তার সঙ্গে তো আর মশকরা করা যায় না। সেতুর ইঞ্জিনিয়র ড্যান প্রেমিকা জুলিয়াকে প্রমে নিবেদন করতেই এমন পরিকল্পনা করেছিলেন। নিউ হ্যামশায়ার ব্রিজ কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মত হওয়ায়। এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। আরও পড়ুন-কাছের মানুষ, সাংবাদিকের পা জড়িয়ে বাড়ি ফেরার আকুতি এই সারমেয়র