থাইল্যান্ডের রাজবাড়ি নিয়ে সেখানাকার মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। মহাভাজিরা লঙ্গ কর্ণ হলেন থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজা। তাঁর রাজকীয় সঙ্গী নির্বাচিত হয়েছেন সেদেশের সামরিক বাহিনীর একজন মেজর। তবে তিনি মহিলা, তাঁকে সেনানার্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর নাম ওঙ্গ ভাজিরা পাকদি। তিনি সব কাজেই সমান দক্ষ, ৩৪ বছরের তন্বী সেনানার্ট যেমন রাজার নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি রেখেছেন। তেমনই রণক্ষেত্রে সমান দক্ষতায় যুদ্ধ করে যান। ৬৭ বছরের জন্মদিনে রাজা নিজে সেনানার্টকে রাজকীয় সঙ্গী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তারপর রাজবাড়ির ওয়েবসাইটে দিয়েছেন সেনানার্টের বিভিন্ন ভূমিকার এক গুচ্ছ ছবি পোস্ট করেছেন। আর সেসব ছবি দেখতে সেদেশের বাসিন্দারা ওয়েবসাইটে এমনভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ল যে রাতারাতি সাইটটি ক্র্যাশ করে গেল।
এই সেনানার্টকে নিয়ে সেখানকার মানুষের মনে কৌতূহলের শেষ নেই। কী এমন আছে সেনানার্টের মধ্যে যে তার জন্য গোটা দেশ পাগল হয়ে তাঁর ছবি দেখতে গিয়ে ওয়েবসাইটটির এই হাল হল? গত তিন শতকের মধ্যে ওঙ্গ ভাজিরা পাকদি একজন মহিলা যিনি রাজার কাছে এই খেতাব ও সম্মান পেলেন। এই সম্মানের নতুন নামও দিয়েছেন রাজা ‘চাও খুন ফ্রা’ । সামরিক বাহিনীর প্রধান থেকে সোজা রাজার নিরাপত্তারক্ষী। ২০১৭ থেকে রাজার দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন, মন দিয়ে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। সিনেনার্ট কিন্তু একদিনে এই পদে নিয়োগ পাননি, এজন্য তাঁকে বিস্তর ঘাম ঝরাতে হয়েছে। মেয়েবেলা থেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তাই ২০০৮ সালে রয়্যাল থাই আর্মি নার্সিং কলেজে ভর্তি হন। সেখানে স্নাতক হওয়ার পর বেশ কয়েকটি সামরিক ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফের একবার স্নাতক ডিগ্রির সুযোগ আসে তাঁর জীবনে। জাঙ্গল ওয়ার ফেয়ারের উপরে আরও একটি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। দুবছর পর সেনা কলেজ ও নৌসেনা স্কুলের দুটি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে ফের বায়ুসেনার উপরে স্নাতক হন। যুদ্ধবিানে দক্ষ হতে জার্মানিতেও পড়াশোনা করে এসেছেন সেনানার্ট।
বেশকিছুদিন সামরিক বাহিনীতে মেজর জেনারেলের পদে কাজ করার পর বছর তিনেক আগে রাজা রাজকীয় সঙ্গী হয়ে যান তিনি। তারপর রাজাকে নিয়ে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে নির্ভয়ে বিচরণ করে চলেছেন। কখনও তাঁর অঙ্গে জলপাই রঙা পোশাক। কখনও জঙ্গলে তো কখনও সেনার কপ্টারে যুদ্ধাস্ত্রের দায়িত্বে। কখনও বা রাজপ্রাসাদে বিভিন্ন সাজে ৩৪ বছরের সেনানার্ট যেন অনন্যা। তাঁর আসল ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন কৌতূহল থাকলেও প্রশ্ন করার অধিকার থাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের নেই। এদেশে যে রাজবাড়ি নিয়ে আলোচনা করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর সমালোচনা করলে তো রক্ষা নেই। বিষয়টি জানাজানি হলে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা কপালে নাচছে। কেই বা সাধ করে জেল খাটতে চায় বলুন তো।
রাজকীয় সঙ্গীর ছবিতে ছেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া, নেটিজেনদের ভিড়ে টালমাটাল ওয়েবসাইট, এই মেয়েকে চেনেন নাকি?
Facebook Comments Box