“স্টর্ম এরিয়া ৫১” এই শব্দটা নিশ্চই এতদিনে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ এলিয়েন, যার পিছনে মানুষ কবে থেকে ছুটে মরছে। ভিন গ্রহের প্রাণী। দেখতে মোটেই মানুষের মতো নয়, তবে বুদ্ধিতে মানুষকে বার বার ধাক্কা দেবে। আমেরিকা নাকি এলিয়েনদের উপরে গবেষণা করছে। সেই কবে থেকে চলছে গবেষণা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানেই যুদ্ধ বিমান নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল। এতকাছে বলতে গেলে এই পৃথিবীতে এলিয়েন রয়েছে আর জেনেশুনেও মানুষ তা দেখবে না। এমনটা তো হতে পারে না। তাই এরিয়া ৫১ অভিযান হবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর। ঠিক ভোর তিনটের সময় ২ লক্ষ লোক পৌঁছাবে এরিয়া ৫১-র গেটে।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে কোথায় এই এরিয়া ৫১, যেখানে এলিয়েনকে বশ মানানোর চেষ্টা করছে আমেরিকা। আগেভাগে বলে রাখি, এরিয়া ৫১-এ যে এলিয়েন আছে তা কিন্তু কোনওভাবেই আমেরিকা স্বীকার করেনি। শোনা যায় সেখানে মার্কিন সেনার যুদ্ধ বিমান রয়েছে। একটা সময় পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এখন নাকি সেসবও বন্ধ, তবে বন্ধ হলে কী হবে, কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা এরিয়া ৫১-এর চৌহদ্দিতে কী আছে কেউ জানে না। গোটা চত্বরটাই রয়েছে মার্কিন সেনার কড়া প্রহরায়। এখানে পৌঁছাতে গেলে আপনাকে পশ্চিম আমেরিকায় আসতে হবে। সেখানেই রয়েছে নেভাদা মরুভূমি আর ওই মরুভূমিতেই রয়েছে রহস্যময় এরিয়া ৫১। লাসভেগাস থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এরিয়া ৫১ চত্বরটিকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে চায় আমেরিকা। তার জন্য চেষ্টার কোনওরকম ত্রুটি নেই। জানা যায়, ১৯৪৭ সালে হওয়া রোসোয়েল বিমান দুর্ঘটনা কোনও নিছক দুর্ঘটনা নয়। এর পিছনে রয়েছে এলিয়েনের তত্ত্ব। ভিনগ্রহের প্রাণীরাই নাকি এই বিমানটি চালাচ্ছিল। তবে কেউ কেউ বলেন বিমান নয় ওটি ছিল ইউএফও। উড়েছিল স্পেসশিপ, আর তার মধ্যে ছিল নাজিদের গবেষণাগারে তৈরি এক ধরনের প্রাণী। এই তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশাও, সেই ধোঁয়াশা-ই এরিয়া ৫১-এর প্রতি মানুষের অমোঘ আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
১৯৬৯ সালে আমেরিকার চাঁদে মানুষ পাঠানো নিয়েও নানাবিধ গল্প চালু আছে। এই যে নীল আর্মস্ট্রং রা চাঁদে পৌঁছানোর ৫০ বছর পূর্তি হল। কিন্তু আদৌ কি চাঁদে গিয়েছিলেন নীল আর্মস্ট্রং, না কি পুরো ব্যাপারটাই আমেরিকার সাজানো? এর উত্তর এখনও মেলেনি। তবে অনেকেই মনে করেন সেই সময় চাঁদে কোনও মহাকাশযান পাঠায়নি আমেরিকা, বরং এরিয়া ৫১-র ছবি সবাইকে দেখিয়েছে। চাঁদের মাটিতে পা দেওয়ার ছাপও এখানেই তোলা। এই তথ্যের সত্যতা খুঁজতে গিয়ে পাগল হয়ে কাজ নেই। চলুন এরিয়া ৫১-র রহস্য জানি, মার্কিন সেনা এরিয়া ৫১ নিয়ে মুখ খুলছে না, তবে তথ্য জানার অধিকার আইন তো আছে। সেই আইনে মামলা হলে আমেরিকাকে মুখ খুলতেই হবে। একটা সময় মার্কিন প্রশাসন একপ্রকার বাধ্য হয়েই জানায়, আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র যুদ্ধ বিমানের ঘাঁটি ওই এরিয়া ৫১। সেখানে ১৯৫৫ সালে অ্যাকোয়াটোন প্রজেক্টের আন্ডারে লকহিড-ইউ-২ নামে একটি ইঞ্জিনযুক্ত যুদ্ধ বিমান তৈরি হয়, সেটি ওড়ানোরও চেষ্টা করা হয়। বলা হয়, ওই যুদ্ধ বিমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক বিমানের চালকরা এই দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ওই লকহিড-ইউ-২ বিমানের ককপিটে বসেই আবহাওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া যেত। মূলত যুদ্ধবিমানটির পরীক্ষামূলক উড়ান লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখানে পাইলটদের যুদ্ধ বিমান চালনার প্রশিক্ষণও দেওয়া হত। নেভাদা মরুভূমিতে থাকা গ্রুম লেক নিয়ে মানুষের মনে নানা ধারণা থাকলেও এটাই সত্যি যে সেখানে একবিন্দু জল নেই। জায়গাটি মরুভূমির অসমতলের মাঝে এক টুকরো সমতল জমি। সেই জায়গাটিকেই রানওয়ে হিসেবে কাজে লাগিয়েছিল মার্কিন সেনা। খুব অল্পদিনেই সেখানে রানওয়ে, রানওয়ে কন্ট্রোল টাওয়ার, ওয়ার্কশপ ও বিমানের শেল্টার তৈরি করা হয়। এই গ্রুম লেকেই পাওয়া গিয়েছে প্রচুর পরিমাণে নুন ও বিভিন্ন খনিজ।
১৯৫৫ সালে বিমান ওড়ানোর প্রসঙ্গ নিয়েও রয়েছে নানা রহস্য। বেশিরভাগেরই দাবি, সেখানে বিমান ওড়েনি উড়েছিল স্পেসশিপ। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রযুক্তি এতটাও উন্নত ছিল না যে ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় যুদ্ধ বিমান উড়বে। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে, ইউএফও উড়িয়েছিল ভিনগ্রহীরা। যদিও এই সম্মিলিত দাবিকে পাত্তা না দিয়ে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র এটিকে বার বার গুজব বলেই চালাতে চেয়েছে। একটা সময় এখানে সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেলেও নিরাপত্তায় কোনও ঘাটতি পড়েনি। চাইলে আপনিও যেতে পারেন তবে ওই এরিয়া ৫১-এর দরজা পর্যন্তই। ভিতরে ঢোকার কোনও অনুমতি নেই। তবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কী হবে মার্কিন সেনা কী ২লক্ষ লোকের জেদের কাছে হার মানবে। জানা নেই, কিন্তু মার্কিন সেনা বাহিনীর মুখপাত্র লরা ম্যাকঅ্যান্ড্রুজ কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল। যতই জন বিস্ফোরণ ঘটুক না কেন কোনও দাবির সামনেই খুলবে না এরিয়া ৫১-এর দরজা।