যত দিন যাচ্ছে ততই করোনাভাইরাসের থাবা দীর্ঘ হচ্ছে। সোমবার চলে গেলেন ভারতীয় কার্ডিওলজির গডমাদার ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati)। ১০৩ বছরের এই প্রথিতযশা চিকিৎসকও গত ১১ দিন ধরে মারণ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসা চলছিল তাঁরই প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল দিল্লির ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটে। ১৯৮১ সালে এই হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা করেন কিংবদন্তী চিকিৎসক পদ্মাবতী নিজেই। সংক্রমণের জেরে নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছিলেন। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এদিন তিনি পরলোক গমন করেন। জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati, প্রথম মহিলা কার্ডিওলজিস্ট
ভারতের প্রথম মহিলা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন এই ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati)। তিনিই প্রথম ভারতে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট চালু করেন। এটি চালু হয়েছিল দিল্লির গোবিন্দ বল্লভ পন্ত হাসপাতালে। গোটা দেশে তাঁর অনুরাগী কম ছিল না। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতীর (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati) সম্পর্ক ছিল সুমধুর। আরও পড়ুন-Rituparno Ghosh: ঋতুপর্ণ ঘোষ ও এক ঋতু-ময় চিত্রকল্প
ভারতে ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati) সাধারণত হৃদরোগের চিকিৎসার গডমাদার হিসেবেই সর্বজন পরিচিত। বাতজনিত হৃদরোগের উপরে তিনি দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। ঠিক এইকারণেই চিকিৎসা জগতে একটা সুপরিচিত নাম ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী। এই বাতজনিত হৃদরোগ হৃৎপিণ্ডের ভালভকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়।
Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati, প্রাণ বাঁচাতে মায়ানমার থেকে ভারতে চলে আসেন
আদতে মায়ানমারের বাসিন্দা ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান মায়ানমার আক্রমণ করে। সেই সময় প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে দেশ ত্যাগ করেন ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী। তারপর থেকে এই ভারতই তাঁর কর্মভূমী। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য এই কিংবদন্তী ডাক্তারকে ১৯৯২ সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। ১৯৭০ সাল নাগাদ ভারতের চিকিৎসাক্ষেত্রে একটি ব্যস্ততম নাম হল ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati)। আরও পড়ুন-Sonajharia Minz: ঝাড়খণ্ডের সোনাঝরিয়া মিনজ এখন স্বাধীন ভারতের প্রথম আদিবাসী মহিলা উপাচার্য
তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। একটা সময় একই সঙ্গে তিনটি নামী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন। এই তিনটি হাসপাতাল হল মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজ, লোক নায়ক হাসপাতাল, জিবি পন্ত হাসপাতাল। ডাক্তারির পাশাপাশি প্রশাসক হিসেবেও যে কতটা দক্ষ ছিলেন, তা সেই সময়কার এই তিন হাসপাতালের চিকিৎসাজনিত পরিষেবা দেখলেই ভালমতো অনুধাবন করা যায়। ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati) একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি এমন দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। তাঁর আগে বা পরে আর কেউই একই সঙ্গে রাজধানীর তিন হাসপাতালের প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন না।
ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতীর (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati) মৃত্যু প্রসঙ্গে দিল্লির ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটে হাসপাতালের সিইও চিকিৎসক ও পি যাদব জানিয়েছেন, দুটি ফুসফুসেই গুরুতর সংক্রমণ হয়েছিল ডা. পদ্মাবতীর। সেই কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পশ্চিম দিল্লির পাঞ্জাবি বাগ শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। করোনা থাবা বসানোর কিছুদিন আগে পর্যন্তও সক্রিয় এবং সুস্থ জীবন কাটিয়েছিলেন দেশের প্রথম মহিলা কার্ডিওলজিস্ট।
ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati) ১৯৬৭ সালে মৌলানা আজাদ মেডিকাল কলেজের ডিরেক্টর-প্রিন্সিপালের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের প্রথম কার্ডিওলজির DM কোর্স চালু করেন। এখানেই পথ চলা শুরু ভারতের প্রথম করোনারি কেয়ার ইউনিট এবং করোনারি কেয়ার ভ্যানের। ১৯৬২ সালে ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতী প্রতিষ্ঠা করেন অল ইন্ডিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন। চিকিত্সা ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৭ সালে পদ্ম ভূষণ।
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশে প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সুস্থতার হারও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু দুদিনে যদি লাখের গণ্ডী পেরোয় আক্রান্তের সংখ্যা তাহলে সেই পরিস্থিতিকে আর ইতিবাচক ব্যখ্যা দেওয়া সম্ভব হয় না। এরই মধ্যে মারণ ভাইরাসো কেড়ে নিল ডাক্তার শিবরামাকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতীর (Dr Sivaramakrishna Iyer Padmavati) জীবনও। আরও পড়ুন-COVID-19 Outbreak In Timbuktu: পৃথিবীর শেষপ্রান্ত টিম্বাকটুতে এবার করোনাভাইরাসের থাবা
সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী দেশে গতকাল সারা দিনে নতুন করোনা আক্রান্ত ৭৮ হাজার ৫১২ জন। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে মারণ রোগে আক্রান্ত ৩৬ লাখ ২১ হাজার ২৪৬ জন ভারতীয়। যার মধ্যে সংক্রামিত সাত লাখেরও বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ছাড়িয়েছে। আইসিএমআর-এর করোনা টেস্ট চার কোটি ছাড়িয়ে গেছে কয়েকদিন আগে। রাজ্যের পরিস্থিতিও ভয়াবহ।
সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে এখানে চলছে লকডাউন। আজ ৩১ আগস্ট পূর্বনির্ধারিত নিয়ম মেনেই লকডাউনে গোটা রাজ্য। সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষের গতিবিধি রুখতে পথে নেমেছে পুলিশ প্রশাসন। শহর কলকাতা-সহ দুই ২৪ পরগনাতে চলছে নাকা চেকিং। শারীরিক অসুস্থতা ছাড়া কোনও গাড়িকেই কলকাতায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। উত্তরবঙ্গেও বহাল লকডাউন। ইতিমধ্যেই করোনার কোপে প্রাণ গিয়েছে শাসক তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতার। বামনেতা শ্যামল চক্রবর্তীও করোনা গ্রাসে প্রাণ হারিয়েছেন। এদিন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অমিত শাহ। করোনার জেরে ফুসফুসে সংক্রমণ বেড়ে চলায় সোমবার আরও শারীরিক সংকটে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর সেপটিক শক হয়েছে, দিল্লির সেনা হাসপাতালের তরফে মেডিক্যাল বুলেটিনে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।