Bhagat Singh

Bhagat Singh: ব্রিটিশ রাজের কারাগারে আমৃত্যু স্বাধীন স্ফুলিঙ্গের নাম ভগৎ সিং

পাঞ্জাবের খাটকার কালান।নবনির্বাচিতা মুখ্যমন্ত্রী ভগওয়ান্ত মান ওই গ্রামের মাঠেই শপথ নিয়েছেন। কারণ স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর শহিদ ভগৎ সিংয়ের (Bhagat Singh) জন্মভূমি এই খাটকার কালান।আজ সেই অভিশপ্ত দিন, যেদিনের ভোর আর তাঁকে দেখতে হয়নি।অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের নির্দেশে গলায় পড়ে নিতে হয়েছিল ফাঁসির দড়ি।তবে দেশভাগের পর খাটকার কালানের সেই বাঙ্গা এলাকাটি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। তবে তাতে আর কিই বা আসে যায়, দেশমায়ের শৃঙ্খল মুক্তির জন্য তাঁর আত্মত্যাগ তো সকল ভারতবাসীর পাথেয়। এই দিনে লাহোরের সেন্ট্রাল জেলে তাঁর ফাঁসি হয়েছিল।



সান্ধু জাট পরিবারের সন্তান ভগৎ সিংয়ের (Bhagat Singh) রক্তে ছিল ব্রিটিশ বিরোধিতা।ভগৎ সিংয়ের দুই কাকা অজিত সিং ও স্বরণ সিং কর্তার সিং সরভ গ্রেওয়াল ও হরদয়াল নেতৃত্বাধীন গদর পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একটি মামলায় গুরুতরভাবে ফেঁসে যাওয়ায় কিনি পারস্যে পালিয়ে যান।অন্যদিকে কাকোরি ট্রেন ডাকাতির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ভগৎ সিংয়ের আর এক কাকু স্মরণ সিংয়ের ফাঁসি হয়।



ভগৎ সিংয়ের ঠাকুর্দা অর্জুন সিং ছিলেন দয়ানন্দ সরস্বতীর হিন্দু সমাজ সংস্কারক আন্দোলন আর্যসমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পূর্বপুরুষরা পাঞ্জাব কেশরী মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের সেনাবাহিনীতে ছিলেন। এহেন দুর্দদমনীয় পরিবারে যাঁর জন্ম তিনি তো প্রতিষ্ঠান বিরোধী মানসিকতায় অনুপ্রাণীত হবেন, এটাই স্বাভাবিক।লাহোরের খালসা হাইস্কুল তখন বেশ জনপ্রিয় ছেলেরা ওই স্কুলে পড়ুক, এমনটাই তাইতো বাবা-মায়েরা। কিন্তু অর্জুন সিং নাতি ভগতকে (Bhagat Singh) কিছুতেই সেখানে পাঠালেন না, কারণ খালসা স্কুল নাকি ইংরেজ প্রভুদের বড়মাপের স্তাবক।

Bhagat Singh (Photo Credits: info@bongmag.com)



ফলে ভগৎ সিংয়ের পড়তে হল আর্যসমাজের স্কুল দয়ানন্দ আর্য বৈদিক অ্যাংলো বিদ্যালয়। সেখানেও বিধি বাম। ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে স্কুলের ইউনিফর্ম ও বই খাতা পুড়িয়ে দিলেন কিশোর ভগৎ। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পরে একসময় তাঁর মোহভঙ্গ হয়। যখন দেখেন চৌরিচৌরার হিংসার ঘটনায় কয়েকজন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন মহাত্মা গান্ধী। এই ঘটনায় বেজায় মানসিক আঘাত পান তরুণ ভগৎ সিং (Bhagat Singh)। তিনি গান্ধীর মতাদর্শ ত্যাগ করে সশস্ত্র বিপ্লবের পথ ধরেন।

 

Kashmir: কাশ্মীর! এক বিভাজিত আখ্যান (চতুর্থ পর্ব)

লালা লাজপত রায়ের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীকে হত্যার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন ভগৎ সিং। ইংরেজ পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট মিস্টার স্যান্ডার্সকে গুলি করে মারেন। সেই অপরাধে জেলে যেতে হয় ভগৎ সিংকে। একটা স্ফুলিঙ্গের নাম ভগৎ সিং, (Bhagat Singh) যখন ব্রিটিশ আধিপত্যে গোটা দেশ নতজানু তখন তিনি কারাগারের মধ্যে সমানাধিকারের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ অপরাধীদের মতো অধিকার ভারতীয় অপরাধীরও চাই, এই দাবিতে টানা ৬৪ দিন অনশন করেছেন।



ধর্মীয় ভাবাবেগের বশবর্তী হয়ে চলতে রাজি ছিলেন না।সবসময় মনে করতেন মৃত্যুর পরে ধর্মকে আশ্রয় করতে হবে। বেঁচে থাকাকালীন কর্মই হল সবচেয়ে বড় ধর্ম। আর যে যুবসমাজ ধর্মকে পাথেয় করে এগোতে চায়, সেই দেশের উন্নতি যে থমকে যাবে, সেবিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন ভগৎ সিং (Bhagat Singh)। ইংরেজের শাসানি, রণ হুংকার, কিছুই তাঁকে চলাতেই পারেনি।

 

Killing Stone Broke: ভাঙল কিলিং স্টোন, জাপানে অশুভ আত্মার ছায়া!

তাই তো নিরুদ্বিগ্ন স্বরেই বলেছেন, শ্রমই হল সমাজের প্রকৃত রক্ষাকারী। নিত্যদিনের দিনগত পাপক্ষয়ের বাইরে বেরনোর পথই বিপ্লবের জন্ম দেয়। এমনটা মনে করতেন বিপ্লবী ভগৎ সিং (Bhagat Singh)। জীবনের লক্ষ্যই হল জীবনী শক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার। পরকালের পরিত্রাণ জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারবে কিন্তু আমার ভাবনাকে মারতে পারেব না।ওরা আমার শরীরকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারবে, কিন্তু আমার আত্মাকে শেষ করতে পারবে না। ছাইয়ের প্রতিটি ক্ষুদ্র অণু আমার উত্তাপের সঙ্গে চলমান। আমার এমনই উন্মাদনা যে কারাগারে বসেও আমি স্বাধীন।নিজের জীবন নিজের মেজাজে বাঁচো, একমাত্র মরার পরই অন্যদের সাহায্য নিও। এমন মতাদর্শ নিয়ে যে মহৎ প্রাণ দেশসেবায় ব্রতী হয়, তাঁকে রুখবে কার সাধ্যি? ১৯৩১ সালের আজকের দিনে পি স্যান্ডার্সকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লাহোর জেলেই ফাঁসি হয় ভগৎ সি, সুখদেব ও রাজগুরুর।

 

Facebook Comments Box

Post Author: bongmag

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।