Bengali New Year

পৃথিবী কবে সুস্থ হবে? এই বৈশাখে স্বপ্ন দেখি…

এবং রূপকথা

অনেকদিন পর ফের চিঠি লিখতে বসেছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইতিহাস বইয়ের পাতায় পড়েছি। তারপরও যুদ্ধ হয়েছে। কখনও দেশ দখলের লড়াই কখনও ক্ষমতা দখলের লড়াই। দুর্বলের উপরে সবলের অত্যাচার দেখতে দেখতেই শৈশব থেকে পেরিয়েছে কৈশোর। যৌবনেও দেখেছি যুদ্ধ। সন্ত্রাসবাদের কালোছায়া আমাদের সর্বদা ঘিরে রাখে। আতঙ্কের প্রহর গুনি নিশিদিন। এই বোধহয় কেউ ব্যাগভর্তি আইইডি রেখে গেল বাসের সিটের নিচে। বড়সড় মেলায় যেতেও আজকাল বেশ ভয় করে। কী জানি বাবা, যদি বোমায় উড়ে যাই।

অডিটোরিয়ামে ক্লাসিক্যাল গানের কনসার্ট হবে, টিকিট পেয়েও সেদিকে তাকাইনি। ভয় হয়েছে যদি বন্দুকবাজের দল হানা দেয়! এমন হাজারো ভয়ের তাড়ায় আমাদের দিন কাটে। তারপরেও কি এক অদ্ভুত খুশি নিয়ে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিলিং হ্যাপি, ফিলিং অ্যামেজিং, ফিলিং ওয়ান্ডারফুল লিখি তার মাথামুণ্ডু নিজেই বুঝি না। আসলে মৃত্যুভয়ে আমারা কেমন গুটিয়ে গেছি। তাই প্রয়োজন না পড়লে বাইরের পৃথিবীকে আমরা ভার্চুয়ালি দেখতেই বেশি ভালবাসি। আর নিজের ব্যক্তিগত পরিসরের কিছু তথাকথিত চকচকে ছবি দিয়ে ভাল থাকার নমুনা তৈরি করি সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়। আরও পড়ুন-স্মৃতিটুকু থাক…

আগে কালবৈশাখী হলে দৌড়ে আমতলায় ছুটে যাওয়াটা আমার প্রিয় হবি ছিল। বৈশাখের তাতা পোড়া দিন শেষে যখন সন্ধে নামতো, অন্ধকারকে সঙ্গী করে কোথা থেকে একটুকরো মেঘও উড়ে আসতো। তারপর আশপাশ থেকে সঙ্গীসাথিদের ডেকে নিয়ে যতক্ষণে সে আকাশে জাঁকিয়ে বসেছে, ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা সাতটা পেরিয়েছে। ঝড় শুরু হতেই আমবাগান ডাকতো। এখনও ঝড় হয়, জানলা দিয়ে বাইরে তাকানোর ফুরসৎ তেমন মেলে না। বরং ধুলো উড়ে ঘর নোংরা হবে বলে সাততাড়াতাড়ি জানলা বন্ধ করে দিই।

এভাবে বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে বৈশাখের সেসব মুহূর্তেরা আজ শোকেসে সাজানো স্মৃতি বিশেষ। মাঝে মাঝে পুরনো দিনকে মনে করে জাবর কাটা ছাড়া তেমন কিছুই করার থাকে না। তবে এবারের বৈশাখ সব স্মৃতিকেই ঝাপসা করে দিল। সকালবেলা বাজার যাওয়ার তাড়া নেই, নতুন জামার গন্ধ নেই। হালখাতার খবর নেই। পার্বণ তো শিকেয় উঠেছে, আগে তো পৈতৃক প্রাণটা বাঁচাই। আরও পড়ুন-ক্যানভাসে বৃষ্টির রাত, প্রহর জাগে ১৪ ফেব্রুয়ারি



বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ চলছে, এক অদেখা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ইতিমধ্যেই লাখো প্রাণ বাজি রেখে চিকিৎসাবিজ্ঞান নতুন অস্ত্র সাজাচ্ছে। বুলেট, বারুদ, সযন্তে সাজিয়ে রাখা স্নাইপার, কোনও কাজে আসেনি। রাষ্ট্রের সৈন্যবাহিনীকে এককথায় ঠুঁটো জগন্নাথ করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কোভিড-১৯। থরহরি কম্প মানুষ। কেউ জানে না এই জ্বরা থেকে কবে মুক্তি মিলবে। পৃথিবীর কবে নতুন বছর আসবে। আবারও খেলার মাঠজুড়ে দৌড়ে ফিরবে গোল্লাছুট, বুড়িচ্চু, সন্ধেবেলা পল্লিবাংলার উঠোন আলো করে প্রদীপ জ্বালবে গৃহস্থবধূ। নতুন বছরে ফের সেদিনের স্বপ্ন দেখি।

Facebook Comments Box

Post Author: bongmag

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।